You have not rated yet!
সঙসপ্তক কাহিনী
আলেক্সিস কিভি (১০ অক্টোবর ১৮৩৪-৩১ ডিসেম্বর ১৮৭২) বেঁচে থাকতে তাঁর শ্রেষ্ঠ বই সঙসপ্তক কাহিনি-র সাফল্য দেখে যাননি। কিভি যে আধুনিক ফিনল্যান্ডের বরেণ্য লেখক এবং জাতীয় চেতনার পথিকৃৎ, একথা বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে, এমনকি তাঁর স্বদেশেও। হেলসিঙ্কির রাউতাতিয়েন্তোরি চত্বরে, ফিনিশ জাতীয় নাট্যশালার সামনে, তাঁর মূর্তি বসানো হয় ১৯৩৯ সালে (ভাস্কর: ভ্যাইন্যো আলতোনেন)। বাংলার আগে মোট চৌত্রিশটা ভাষায় কিভির এই উপন্যাসের অনুবাদ বেরিয়েছে, তার মধ্যে এশীয় ভাষা আরবি, চিনে, জাপানি, তুর্কি, ফারসি, হিব্রু।
ফিনল্যান্ডের যে সাত ভাই এই অনূদিত উপন্যাসের নায়ক, তাদের সঙ্গে মহাভারতের ওই দৃঢ়সংকল্প সাহসী যোদ্ধাদের কিছু মিল সত্যিই পাওয়া যায়। কিন্তু ঙ আর দন্ত্য স দিয়ে “সঙ-সপ্তক” বানান কেন? বানানটার কাজ হল মনে করিয়ে দেওয়া যে ওই সাতজন তরুণকে ঠাট্টা করবার জন্যে শত্রুরা যে গান বেঁধেছিল তাতে ওদের বলা হয়েছিল সাতটা সঙ। লোকজনের নির্মম হেনস্তা গায়ে মেখে ওরা জীবনযুদ্ধে এমন রণনীতি বেছে নিয়েছিল যাতে বিদ্রুপের জবাব দিতে পারে। শত্রুদের চোখে চোখ রেখেই ওদের সেই অভাবনীয় জয়যাত্রা, যেটার গুণে এই উপন্যাস বিশিষ্ট সার্থকতা অর্জন করেছে।
এ গল্পের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের কী সম্পর্ক? সঙসপ্তক কাহিনির মূল বিষয় হল, ব্রাত্যরা কীভাবে নিজেদের আত্মসম্মান অটুট রেখেও শিক্ষালাভ করে সমাজের মূলস্রোতে স্বীকৃতি পেতে পারে। দারিদ্র্য ও বঞ্চনার ফলে যেসব মানুষ বহু শতাব্দী ধরে শিক্ষার সুযোগ পায়নি, আজ তারা অভূতপূর্ব অনুপাতে ইস্কুল কলেজে যাচ্ছে। নয়া সাক্ষরের অদম্য উৎসাহে ভরা কৌতূহলী চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে নিচ্ছে কোন পথে চললে পরবর্তী প্রজন্ম এই দুর্দশার শৃঙ্খল কেটে বেরোতে পারবে। আমাদের সারা সমাজ জুড়ে এই যে বিরাট মন্থন চলছে, শিক্ষাপ্রাপ্তি আর মর্যাদালাভের দিকে এগিয়ে চলার এই নাটকীয় সময়টাকে পরিষ্কার বুঝতে পারবার জন্যে স্পষ্টতই বাঙালি পাঠকমাত্রেরই সঙসপ্তক কাহিনি পড়া উচিত।
Similar e-Books
AVG
total
No of rating