দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
Dakshniaranjan Mitra Mazumdar
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৫ এপ্রিল ১৮৭৭ - ৩০ মার্চ ১৯৫৭) ছিলেন বাংলার খ্যাতিমান শিশু সাহিত্যিক ও লোককথার সংগ্রাহক, যাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রূপকথাগুলিকে যথাসম্ভব অবিকৃত রেখে সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করা।
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ‘ভট্টাচার্য এন্ড সন্স' থেকে ঠাকুরমার ঝুলি প্রকাশিত হয়। দীনেশচন্দ্রের কাছেই রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণারঞ্জনের কথা শোনেন এবং ঠাকুরমার ঝুলি গ্রন্থের ভূমিকা রচনা করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বদেশি গানের সংকলন যা বা আহুতি প্রকাশিত হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় নারীচরিত্রের মহিযাজ্ঞাপক গ্রন্থ আর্থনারী (২ খণ্ড) এবং প্রাচীন ভারতের ধর্মচিন্তা বিষয়ক শিশুপাঠ্য গ্রন্থ সচিত্র সরল চন্ডীপ্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত তোষণী পত্রিকায় তাঁর লেখা চারু ও হারু নামক কিশোর উপন্যাসটি ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত হয়। শিশু-কিশোরদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে তিনি অজস্র কবিতা, গল্প, জীবনী রচনা করেন। ১৯৩০-৩৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণারঞ্জন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এই সংস্থার মুখপত্র পথ-এর প্রদর্শক সম্পাদকও ছিলেন। এই কাজে তাঁর বিজ্ঞানচেতনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের ‘বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সমিতি'র কার্যকরী সভাপতি ও পরিভাষা রচয়িতার দায়িত্ব তিনি পালন করেন। ঢাকা বান্ধবসমাজ তাঁকে ‘কাব্যানন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি কলিকাতা সাহিত্য সম্মেলনে ‘বাণীরঞ্জন’ উপাধি, শিশুসাহিত্য পরিষদের ‘ভুবনেশ্বরী পদক' লাভ করেন। লোকসংস্কৃতি পরিষদ, সব পেয়েছির আসর, নন্দন, সাহিত্যতীর্থ প্রভৃতি সংস্থা তাঁকে সম্মানিত করে পরে যখন পিসেমশায়ের জমিদারির ভারপ্রাপ্ত হয়ে ময়মনসিংহে থাকতে শুরু করেন সেই সময় দশ বছর ধরে বাংলার লুপ্তপ্রায় কথাসাহিত্যের সংগ্রহ ও গবেষণা করেন। পরে এই সংগৃহীত উপাদানসমূহ ও ড. দীনেশচন্দ্র সেনের উপদেশনুযায়ী রূপকথা, গীতিকার, রসকথা ও ব্রতকথা - এই চারভাগে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গের পল্লি-অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় বিপুল কথাসাহিত্যকে 'ঠাকুরমার ঝুলি','ঠাকুরদাদার ঝুলি','দাদামশায়ের থলে','ঠানদিদির থলে' প্রভৃতি গল্পগ্রন্থে স্থায়ী রূপদান করেছেন।